বাদামখাওয়ার উপকারিতা
সহজে বহন করা যায়- এমন খাবারের মধ্যে প্রথমেই আসে বাদামের কথা। এখনকার এই ব্যস্ত দিনে কাজের ফাঁকে সময় করে খাওয়ার কথা মাথাই থাকেনা। প্রায় সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া হয়। কিন্তু কাজের ফাঁকে যদি প্রতিদিন অল্প করে বাদাম খাওয়া যায় তবে মন্দ হয় না। বাদাম শুধু খেতেই যে অসাধারণ তা নয়, নানা পুষ্টিগুনেও ভরপুর। যার ফলে এই বাদাম বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
***বাদামের ধরণ ***
বাদাম বলতে সব ধরণের বাদামকেই এক্ষেত্রে ধরা হয়, যেমন- আখরোট , কাজু , আমন্ড/কাঠ বাদাম , পেস্তা বাদাম প্রভৃতি।
***বাদামের মধ্যে যা থাকে ***
আকারে ছোট হলেও সকল প্রকার খাদ্য গুণাগুণ এতে বর্তমান। যেমন- ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, লিউটিন, জিজ্যানথিনের মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।
কাঠ বাদামের উপকারীতা-
- সুপারফুড কাঠ বাদাম বাড়ায় পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা।
- আমন্ডের মধ্যে ওলেয়িক অ্যাসিড , সেলে নিয়াম , ভিটামিন ই এবং বিভিন্ন ফাইটো কেমিক্যালস ক্যানসার প্রতিরোধে খুবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কাঠ বাদামের সবথেকে শক্তিশালী গুণ হল, মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতেও এটি দক্ষ।
- ভিটামিন ই এবং পটাশিয়াম থাকার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে কাঠ বাদাম।
- সকাল বেলা উঠেই দুটো কাঠ বাদাম খেয়ে নিলেই তরতাজা থাকা যায়।
- এনার্জি লেভেল ঠিক রাখতে রোজ কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত।
- ভিটামিন ই, এ, বি১, বি৬ থাকার ফলে চুলও ভাল রাখে কাঠ বাদাম।
- ম্যাগনেশিয়ামের জন্য চুল গোড়া থেকে সুস্থ থাকে ও তাড়াতাড়ি বাড়ে।
#খিদে পেলে অল্প করে কাঠ বাদাম খেয়ে নিন। এতে খিদে যাবে। কিন্তু ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণেই। প্রোটিন যুক্ত এই বাদাম খেলে সুগার লেভেলও ঠিক থাকবে। তাই মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছেও থাকে না ২-৩ টে কাঠ বাদাম খেয়ে নিলে। আর তাই ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
#কাঠ বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই। ভিটামিন ই ত্বক সুন্দর রাখে আর মুখে বয়সের ছাপ পড়ে না।
#কোলেস্টেরল লেভেলও ঠিক রাখতে পারে কাঠ বাদাম। এর মধ্যে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, প্রোটিন। যার ফলে হার্টকেও সুস্থ রাখে কাঠ বাদাম।
#হজমের জন্যও কাঠ বাদামের জুড়ি মেলা ভার। এতে যে ফাইবার থাকে, তা হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কাজু বাদামের উপকারিতা-
#কাজু বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী কারণ এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এবং ফাইবার আছে। নিয়মিত কাজু বাদাম খেলে ক্যান্সার, হৃদরোগজনিত জটিলতা, স্থূলতা এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৪টি বা ২৮ গ্রাম কাজু বাদামে ৩ দশমিক ৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ৯ গ্রাম মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়। প্রতিদিন মাত্র ৪ টি করে কাজু বাদাম খেলে শরীরের যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়-
১. কাজু বাদাম শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। সেই সঙ্গে ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। ভাল কোলেস্টেরল বাড়লে শরীরের নানা জটিলতা বিশেষ করে হৃদরোগ , স্ট্রোক এবং ধমনী সংক্রান্ত সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।
২. কাজু বাদামে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে যা চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। চুলের বৃদ্ধির জন্য এতে ম্যাগনেশিয়াম এবং জিঙ্কও রয়েছে। কাজু বাদামে থাকা ভিটামিন ই মানসিক চাপ কমায়। সেই সঙ্গে চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
৩. কাজু বাদামে উপস্থিত ভিটামিন ই এবং ম্যাঙ্গানিজ ত্বকের অকাল বার্ধক্য রোধ করে।
৪. কাজু বাদামের খোসা প্রিবায়োটিকের দারুণ উৎস যা অন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে ভূমিকা রাখে। এটি হজমশক্তিও বৃদ্ধি করে। এছাড়া ভাল ব্যাকটেরিয়া যেকোন ধরণের সংক্রমণ সারাতেও দারুণ ভূমিকা রাখে।
৫. যদিও কাজু বাদামে ফ্যাট এবং ক্যালরি আছে তারপরও এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কাজু বাদাম খেলে পেট ভরা অনুভূত হয় । তখন বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে।
৬. গবেষণা বলছে, কাজু বাদামে থাকা ভিটামিন ই বয়সজনিত ভুলে যাওয়া রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়।
সূত্র: এইচএইচডিরিসার্স
পেস্তা বাদামের যত উপকারিতা
১. পেস্তাবাদামে রয়েছে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে।
২. পেস্তা লো-গ্লিসেমিক ইনডেক্স ধরনের খাবার। অর্থাত্ পেস্তা থেকে কার্বোহাইড্রেট ধীরে ধীরে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য বজায় থাকে।
৩. পেস্তাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬।
৪. নানা ধরনের বাদামের মধ্যে পেস্তাতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোস্টেরল। পেস্তাবাদামে লুটেন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বয়সের কারণে সৃষ্ট নানা শারীরিক সমস্যা যেমন মাংসপেশির দুর্বলতা, চোখের ছানির সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৫. পেস্তাবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে ফ্যাটের পরিমাণও কম। ফলে রক্তে লিপিডের পরিমাণ বজায় রাখতে পেস্তা সাহায্য করে।
৬. দাঁতের রোগ ও লিভারের সমস্যায় পেস্তাবাদাম বেশ উপকারী।
আখরোটের উপকারীতা-
আখরোট (ইংরেজিতে যাকে ওয়ালনাট বলে) বহুকাল থেকেই মানুষের প্রিয় খাদ্য।
#আখরোট ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড , ফাইবার , ভিটামিন ই ইত্যাদি থাকায়, নিয়মিত কিছু পরিমানে আখরোট খেতে পারলে রক্তের মধ্যে বেড়ে যাওয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক হয়।
১. ওজন কমাতে সাহায্য করে:
আখরোটে ওমেগা থ্রি ফ্যাট, প্রোটিন ও ফাইবারের যথাযথ ভারসাম্য থাকে। ফলে যদি আপনি ওজন কমানোর জন্য ডায়েটিং-এর পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে আখরোটকে অবশ্যই আপনার খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত করুন।
২. নিদ্রাহীনতা কমায়:
আখরোটে মেলাটোনিন বলে একটি উপাদান থাকে। এই মেলাটোনিন ঘুমের পক্ষে ভাল। ফলে যাঁরা ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা নিয়মিত আখরোট খেলে উপকার পাবেন।
৩. চুলের পক্ষে ভাল:
আখরোটে থাকে ভিটামিন বি সেভেন। এই ভিটামিন চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া কমায়, এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
৪. হার্টের রোগ দূরে রাখে:
আখরোটের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে খারাপ (ব্যাড) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভাল (গুড) কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এতে হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমে।
৫. ত্বকের উজ্জলতা বজায় রাখে:
আখরোট বি-ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ একটি খাবার। তাই আখরোট আপনার ত্বকে চট করে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ত্বককে টানটান ও উজ্জ্বল রাখে।
৬. স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে:
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত আখরোট খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক স্থিরতা আসে।
৭. পুরুষদের মধ্যে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়সি পুরুষরা যদি দৈনিক ৭৫ গ্রাম করে আখরোট খান, তাহলে তাঁদের শুক্র উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও শুক্র কোষের স্বাস্থ্যোন্নতি ঘটে।